হাওজা নিউজ বাংলা এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, পর্ব ৩- কারবালায় ১০ মহররম ইমাম হোসেন (রা.)-এর মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়।
হজরত আলী (রা.) এবং মা ফাতেমা (রা.)-এর দ্বিতীয় পুত্র ইমাম হোসেন (রা.)-এর জন্ম ৬২৬ সনের জানুয়ারি মাসের ১১ বা ১৩ তারিখে। জন্মের পর বড় ভাই ইমাম হাসান (রা.)-এর মতো তিনিও নানা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর স্নেহধন্য হয়েছিলেন। পরবর্তী জীবনে পিতা হজরত আলী (রা.)-এর অপমৃত্যু, মা ফাতেমা (রা.)-এর করুণ মৃত্যু এবং বড় ভাই ইমাম হাসান (রা.) কে বিষ প্রয়োগে হত্যার প্রেক্ষিতে ইমাম হোসেন (রা.) সঙ্গত কারণেই নিজেকে গুটিয়ে নেন। তিনি কেবল নিজ গোত্র বনু হাশিমের প্রধান হিসেবে সাধারণ জীবনযাপন করতে থাকেন। এ সময় কুফাবাসীর মধ্যে যারা মুয়াবিয়ার প্রতি বিভিন্ন কারণে বিক্ষুব্ধ ছিল তারা ইমাম হোসেন (রা.) কে কুফায় আগমনের আমন্ত্রণ জানায় এবং মুসলিম বিশ্বের হাল ধরার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ইমাম হোসেন (রা.) তার ভাইয়ের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক মুয়াবিয়া জীবিত থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার নেতৃত্ব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। ৬৮০ সনে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর তারই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার পুত্র ইয়াজিদ ক্ষমতায় আরোহণ করেন।
এ অযৌক্তিক আয়োজন মেনে নিতে পারেননি ইমাম হোসেন (রা.)। কিন্তু ইয়াজিদ যে কোনো মূল্যে ইমাম হোসেন (রা.)-এর আনুগত্য আদায়ে অনড় ছিলেন। তিনি বিভিন্ন প্রলোভন ও কূটকৌশলের মাধ্যমে মদিনার শাসক এবং প্রভাবশালীদের সমর্থন নিয়ে ইমাম হাসান (রা.)-এর ওপর নানামুখী চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। এমনকি এক পর্যায়ে ইমাম হোসেন (রা.)-এর জীবনের ওপর হুমকি দেওয়া হয়। ফলে তিনি কুফা থেকে আপনজনদের সবুজ সংকেত পেয়ে কুফার পথে যাত্রা করেন। পথিমধ্যে তিনি ইয়াজিদের বাহিনীর সম্মুখীন হন এবং ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হোসেন (রা.) এর কাফেলা ও পরিবারকে মক্কা বা কুফার বদলে অন্য কোথাও সরে যেতে নির্দেশ দেন। অন্যদিকে কূটকৌশল ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হোসেন (রা.) এবং তার সঙ্গীদের ‘কারবালা’ নামক পানিবিহীন স্থানে বা মরুভূমিতে অবস্থান নিতে বাধ্য করেন। ৬৮০ সনে অর্থাৎ হিজরি ৬১ সনের মহররম মাসের ৮, ৯ ও ১০ তারিখ এ ৩ দিন পানিবিহীন থাকার পর শিশুপুত্র আজগরের জন্য পানি সংগ্রহ করতে তাঁবু এলাকা ও কাফেলা থেকে বের হন এবং ধু-ধু মরুভূমিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল ইয়াজিদ বাহিনী। এ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত তীর প্রথমে ইমাম হোসেন (রা.)-এর মুখে বিদ্ধ হয়। ইয়াজিদের বিশেষ ভক্ত ও অনুগত মালিক ইবনে নুসাইয়ার এ সময় ইমাম হোসেন (রা.) মাথায় আঘাত করেন। এতে তার মাথা কেটে রক্ত ঝরতে থাকে। এ সময় দৃশ্যপটে আসেন ইয়াজিদের বিশেষ অনুগত সিমার। ইমাম হোসেন (রা.) আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সিমারের নির্দেশে সিনান ইবনে আনাস নামের এক নিষ্ঠুর সৈন্য ছুরি চালিয়ে ইমাম হোসেন (রা.)-এর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ তিন দিন বিভিন্ন ধাপে যুদ্ধ, তাঁবুতে অগ্নিসংযোগসহ নানা অত্যাচারে একে একে প্রাণ হারান ইমাম হোসেন (রা.)-এর শিশুপুত্র আলী আসগর (আবদুল্লাহ), আলী আকবরসহ তাঁর পরিবারের সব সদস্য এবং সঙ্গী সাথীগণ।
স্বল্প সংখ্যক বেঁচে থাকা সদস্যকে পরে বন্দী করা হয়। অন্যদিকে ইমাম হোসেন (রা.)-এর বিচ্ছিন্ন মাথাকে অপদস্ত করার তথ্য পাওয়া যায় এবং অন্তত সাতটি স্থানে তার পবিত্র মাথা দাফনের খবর পাওয়া যায়।…চলবে…
লেখা: মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি